প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা কেমন জেনে নিন

 প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা কেমন জেনে নিন

  দেশের   সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবার ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পেতে যাচ্ছে। সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দেশের বড় নিয়োগ। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাঁরা প্রাথমিকে যোগ দিতে যাচ্ছেন, তাঁদের আগে জানা দরকার এই চাকরির বেতন ও সুযোগ-সুবিধা কেমন।

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে  যোগদান করলে আপনি হবেন সরকারি রাজস্বভুক্ত চাকরিজীবী। শুরুতেই বেতন ১৩তম গ্রেডে (১১,০০০-২৬,৫৯০ টাকা)। মূল বেতন ১১ হাজার টাকা। এলাকাভেদে বাড়িভাড়ায় কিছুটা ভিন্নতা হতে পারে । ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৬০ শতাংশ। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার জন্য মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া। অন্যান্য স্থানের জন্য বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ।

দেশের সহকারী শিক্ষকদের চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা। টিফিন ভাতা ২০০ টাকা প্রতিদিন। যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা প্রতিদিন। সব মিলিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট বেতন ১৯ হাজার ৫০০ টাকা।দেশের চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকায় মোট বেতন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যান্য স্থানে মোট বেতন ১৭ হাজার ৯৫০ টাকা। এই বেতন থেকে কল্যাণ তহবিলের জন্য সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা এবং ডাকটিকিটের জন্য ১০ টাকা কেটে নেওয়া হয়।

প্রতিবছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বেতনবৃদ্ধি হবে। অর্থাৎ ৫৫০ টাকা করে বৃদ্ধি হবে প্রতিবছর । প্রতিবছর মূল বেতনের সমপরিমাণ দুটি উৎসব ভাতা। অর্থাৎ ১১ হাজার টাকা করে উৎসব ভাতা। প্রতিবছর মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা অর্থাৎ ২ হাজার ২০০ টাকা। চাকরি তিন বছর পূর্ণ হলে মূল বেতনের সমপরিমাণ শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাওয়া যায়। চাকরিজীবনে পাবেন দুটি টাইম স্কেল।

সহকারী  প্রাথমিক শিক্ষক  থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে পদোন্নতির সংখ্যা খুবই সীমিত। দেশের উপজেলায় পদ খালি থাকা সাপেক্ষে পদোন্নতি পাওয়া যায়। অনেকে চাকরিজীবনের ২০ থেকে ২২ বছর পার করে অনেকে  পদোন্নতি পান। সহকারী শিক্ষকেরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও পিটিআই ইনসট্রাক্টর পদে আবেদন করতে পারবেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সেসব পদে চাকরি করতে পারবেন। এ ছাড়া পিটিআইতে ১৮ মাসের ডিপিএড ট্রেনিংয়ে সেখানে ভালো ফলের ভিত্তিতে সেরা ১০ জনকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

আপনার সন্তানের বয়স পাঁচ বছর হলে শিক্ষা ভাতা (১ জন হলে ৫০০ টাকা, দুজন হলে ১ হাজার টাকা) পাবেন। মূল বেতনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ জিপিএফ ফান্ডে জমা রাখতে পারবেন। চাকরি শেষে জিপিএফ ফান্ডের ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৩ শতাংশ হারে মুনাফা আর যদি ১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে হয় তাহলে ১২ শতাংশ মুনাফা এবং ৩০ লাখের ওপরে হলে ১১ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন।

জিপিএফ ফান্ড থেকে বিনা মুনাফায় ঋণ নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। গৃহনির্মাণের ঋণের ব্যবস্থাও আছে। যোগ্যতা সাপেক্ষে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ভাতা পাওয়া যায়। গণিত অলিম্পিয়াড মাস্টার ট্রেনার ট্রেনিং, ট্রেনার অব মাস্টার ট্রেনার ইন ইংলিশের (টিএমটিই) কোহর্ট এবং আইসিটি ট্রেনিংয়ে পারিশ্রমিক পাওয়া যায়।

অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় সন্তানের জন্য পোষ্য কোটা রয়েছে। যোগ্যতা সাপেক্ষে আপনি এক বছর বিদেশে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন। খরচ দেবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

চাকরির পাঁচ বছর পূর্ণ হলে আপনি পেনশনের আওতায় পড়বেন। চাকরি শেষে পাবেন ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ল্যামগ্রান্ড, এক বছরের পিআরএল, অর্জিত মূল বেতনের ২৩০ গুণ পেনশন ও আজীবন পারিবারিক পেনশন। ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে পেনশনারদের মাসিক চিকিৎসা ভাতা হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা।

প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে (১২,৫০০-৩০,২৩০ টাকা)। প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি অর্থাৎ ৬২৫ টাকা। প্রধান শিক্ষক পদটি ব্লক পোস্ট। তাই ৪৫ বছর পর্যন্ত বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও পিটিআই ইনসট্রাক্টর পদে পরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সেসব পদে চাকরি করতে পারবেন।