Header Ads

ব্যাংক জব, লিখিত পরীক্ষা: যেভাবে প্রস্তুতি নিলে আসবে নিশ্চিত সাফল্য

 ব্যাংক জব, লিখিত পরীক্ষা: যেভাবে প্রস্তুতি নিলে আসবে নিশ্চিত সাফল্য


বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যাংকিং খাত একটি বিশাল সম্ভাবনার নাম। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে, আজকাল অনেকগুলো ব্যাংক বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে ও তাদের সাথে কাজ করার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, যাতে করে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ও উন্নয়ন ব্যাংকিং খাতে কাজ করার জন্য অসংখ্য তরুণকে অনুপ্রাণিত করছে। সেজন্যই চাকরি প্রত্যাশীদের নিমিত্তে আমাদের আজকের এই আয়োজন। 


ব্যাংক জব সম্ভাবনা ও সুযোগ 


ধনতান্ত্রিক বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাতে মুক্তবাজার অর্থনীতির এই সময়ে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে ব্যাংকিং খাত। আধুনিক ব্যাংকগুলো প্রযুক্তিগতভাবে হয়েছে আরও অনেক বেশি দক্ষ আর সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন। তাই বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা গ্রাজুয়েশনের পর আরও বেশি করে এইদিকে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ঝুঁকছে। এই পেশায় একদিকে যেমন ভালো সম্মান আছে, অন্যদিকে কাজে লেগে থাকতে পারলে ভবিষ্যতে বেশ সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। 


বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর কথা বললে প্রথমেই মাথায় আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম। সমগ্র রাষ্ট্রের আর্থিক লেনদেনের পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে কারেন্সি ইস্যু করা, বৈদেশিক মুদ্রার রক্ষণাবেক্ষণ করা, রাষ্ট্রের রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নজরদারি করার কাজ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের। বর্তমানে সারা দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি অফিস কার্যকর রয়েছে।



ব্যাংক জব, লিখিত পরীক্ষা: যেভাবে প্রস্তুতি নিলে আসবে নিশ্চিত সাফল্য


শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকই নয়, এছাড়াও আছে ৫৯টি নির্ধারিত বা তফসিলি ব্যাংক এবং ৫টি অনির্ধারিত ব্যাংক। ৫৯টি তফসীল ব্যাংকের মাঝে রয়েছে ৬টি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক যেগুলো আমরা সরকারি ব্যাংক নামে চিনি। এছাড়াও রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৩টি বিশেষ ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর উদ্দেশ্য হলো কৃষি এবং শিল্পের উন্নয়নে কাজ করা। বাকিগুলো বেসরকারি ব্যাংক, এদের মধ্যে ৩৩টি তথাগত নিয়মে পরিচালিত। অর্থাৎ সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা। আর বাকি ৮টি ইসলামি শরিয়াহ নিয়মে পরিচালিত। অর্থাৎ এসকল ব্যাংক সুদের বদলে গ্রাহকের সাথে লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেয়। অতএব সবকিছু বিবেচনায়, আমাদের দেশে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টর যে বেশ প্রশস্ত তা নির্দ্বিধায় বলাই যায়। 



যে-কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই কি অংশ নেয়া যাবে? 


শুরুতে যদিও মনে হতে পারে শুধু বাণিজ্য তথা কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের জন্যই ব্যাংকগুলোর চাকরি, তবে বাস্তবতা কিন্তু বাকিদের জন্যও যথেষ্ট আশা জাগানিয়া। ব্যাংকের চাকরি পেতে বা করতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ তেমন কোনো বিষয় নয়। আসল বিষয়টা হলো পরীক্ষায় ভালো করা। তার আগে আবেদন করার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো যদি একটু খেয়াল করেন দেখবেন ‘আবেদন করার ন্যূনতম যোগ্যতা যেকোনো বিষয়ে স্নাতক’। অর্থাৎ, আপনি যে বিষয়েই পড়াশোনা করে থাকুন না কেন, নিশ্চিন্তে এই ফিল্ডে আসতে পারেন।  


প্রশ্নপদ্ধতি ও মানবণ্টন


বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগ দেয়া হয়। পদভেদে এসব ব্যাংক জব প্রস্তুতির জন্য দরকার হয় আলাদা প্রস্তুতির। তবে কিছু কমন বিষয়ে মিল থাকে। সাধারণত প্রিলিমিনারিতে ১০০, লিখিত পরীক্ষায় ২০০ আর মৌখিক তথা ভাইভাতে ২৫ নম্বর থাকে। প্রথমে মানবণ্টন সংক্ষেপে বলে নিই, এরপর প্রস্তুতির ব্যাপারে পরবর্তী অনুচ্ছদে বিস্তারিত আসছে। 



প্রিলিমিনারি প্রশ্নের বিষয়বস্তু ও মানবণ্টন


বিষয়বস্তুনাম্বার বণ্টনবাংলা ভাষা ও সাহিত্য২০ইংলিশ২০গণিত ও মানসিক দক্ষতা৩০সাধারণ জ্ঞান২০কম্পিউটার১০


লিখিত পরীক্ষা, মানবণ্টন ও প্রস্তুতি


বিষয়বস্তুনাম্বার বণ্টন

বাংলা২৫-৩০

ইংলিশ১০০ এর বেশি

গণিত৫০-৭০



বাংলা 


বাংলা অংশে মূলত ব্যাকরণ ও বাংলা সাহিত্য থেকে প্রশ্ন করা হয়। ব্যাকরণ থেকে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, বাক্য, লিঙ্গান্তর, সন্ধি-বিচ্ছেদ, বচন, বানান শুদ্ধি, সমাস, কারক ও বিভক্তি, পদ, প্রকৃতি-প্রত্যয়, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ, অর্থনীতিবিষয়ক প্রবন্ধ, অনুবাদ প্রভৃতি থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ ছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎপত্তি এবং বিকাশ, বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী, তাদের কর্ম, সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য চরিত্র, ঘটনা ও উক্তি, বিখ্যাত পত্রপত্রিকার সম্পাদক ইত্যাদি সম্বন্ধেও প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাছাড়া Focus Writing in Bangla থাকবে, এখানে বাংলায় কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হবে। এখানে বাংলায় সাহিত্যের ভাষা ব্যবহার করে নিজের আবেগকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারাটাই মূল বিষয়।




ইংরেজি


গ্রামার আর ভোকাবুলারি থেকে ইংরেজির প্রশ্ন আসে। গ্রামারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ম জানা থাকলেই বেশ ভালো মতো উত্তর করে আসা যায়। আর ভোকাবুলারির জন্য Synonym and Antonym, Phrase and Idioms, One word substitutes, Spelling Mistake, Analogy এসব জানা জরুরি। আর গ্রামারের জন্য Tense, Verbs, Prepositions, Parts of Speech, Voice, Narration, Degree of Comparison, Group Verbs এগুলোর নিয়ম শিখে রাখা জরুরি।


এছাড়া ইংরেজির মধ্যে Focus Writing in English আসবে, এখানে কোনো একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে আপনার কাছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে। এখানে দেখা হয় আপনার কাছে যা চাওয়া হয়েছে সেটি সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারছেন কিনা। এবং Creative Writing in English থাকবে, এখানে এমন প্রশ্ন করা হবে যার মাধ্যমে আপনি ইংরেজিতে কতোটা সাবলীলভাবে লিখতে পারেন তা বোঝা যায়। সবশেষে ৩০ নম্বরের English Comprehension থাকবে, এই প্রশ্নে একটি অনুচ্ছেদ দিয়ে সেখান থেকে ছোট ছোট প্রশ্ন করা হবে। অনুচ্ছেদের মূল বিষয় বুঝতে পারলে প্রশ্নগুলোর উত্তর সহজেই পেরে যাবেন।


গণিত


গণিত থেকে শতকরা, সুদ-আসল, লাভ-ক্ষতি, বিন্যাস-সমাবেশ, অংশীদারি কারবার, বয়স, অনুপাত, লসাগু-গসাগু, সরল, ঐকিক নিয়ম, বর্গ, মান নির্ণয়, সমান্তর ধারা নির্ণয়, সাধারণ চার নিয়ম, সমাধান, জ্যামিতিক সূত্র ও সংজ্ঞা, এবং সমীকরণ এর মতো বিষয় থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। গণিতকে বীজগণিত, পাটিগণিত, ও জ্যামিতি এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়। জ্যামিতি থেকে প্রশ্ন খুব কম আসে। তাই বাকি দুই অংশকে বেশি গুরুত্ব দিলে ফল ভালো আসে।



আনুষঙ্গিক: সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার, মানসিক দক্ষতা 


মূলত বাংলাদেশ আর আন্তর্জাতিক এই দুই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সাধারণ জ্ঞান অংশে। বাংলাদেশ বিষয়ক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ভৌগোলিক বিষয়াবলি, সীমানা, আয়তন, কৃষিজ, বনজ, প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদ, নদ-নদী, শিল্প ও বাণিজ্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, পুরস্কার ও সম্মাননা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় এবং সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি সম্পর্কে জানতে হয়। এ ছাড়া বিশ্ব রাজনীতি, সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি, মহাদেশ, সীমারেখা ও স্থান, দেশ ও জাতি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন, চুক্তি ও সনদ, পুরস্কার ও সম্মাননা, বিশ্ব অর্থনীতি, শিল্প ও বাণিজ্য, খেলাধুলা, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, বিখ্যাত স্থান ও স্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে।


বুদ্ধিমত্তা বা মানসিক দক্ষতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা যাচাই করার জন্য ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়। নিজের বুদ্ধিমত্তা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রশ্নগুলোর উত্তর করতে হবে। তাছাড়া কম্পিউটার অংশ থেকে কম্পিউটার যন্ত্র পরিচিতি, বাইনারি নাম্বার, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এবং এক্সেল শর্টকাট, সোশ্যাল মিডিয়া, গেইট মেকানিজম ইত্যাদি বেসিক জিনিস থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। বিষয়গুলো বেশ কঠিন। কিন্তু ঠিকমত প্রস্তুতি নিলে জয় করা সম্ভব।




বুকলিস্ট


সাধারণত বইয়ের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটা হয়, আমরা হরেক রকম বইয়ের ফর্দ হাতে পাই, এবং শেষমেশ কোনটা থেকে কী পড়বো তার সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে কোনোটাই ঠিকমত পড়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু একটু কৌশল করে যদি সামান্য কিছু কাজের বইই সুন্দরমত পড়ে শেষ করা যায়, তবে প্রস্তুতির আর ঘাটতি থাকে না। এই অংশে আমরা সেই খুবই কাজের গুটিকয়েক বইয়ের নাম আলোচনা করবো। 


বাংলা: নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যকরণ, সৌমিত্র শেখর এর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, এমপিথ্রি জর্জের বাংলা বই। 


ইংরেজি: গ্রামারের নিয়ম জানার জন্য Barron’s অথবা Cliff’s TOEFL এর পাশাপাশি বাজারে ভালো চলে এমন একটি বই সাথে রাখতে পারেন। আর ভোকাবুলারির জন্য GMAT/GRE Vocabulary পড়লেই চলবে। তবে সাথে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের IBA তে MBA এর পরীক্ষার জন্য যে বইগুলো বাজারে আছে সেগুলো পড়তে পারেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়।


গণিত: গণিত পাঠ্য বই ক্লাস ৭ম, ৮ম, ৯ম-১০ম (সাধারণ এবং উচ্চতর), একাদশ-দ্বাদশ (উচ্চতর গণিত) অধ্যায় সেট, বিন্যাস এবং সমাবেশ। Barron’s GMAT/GRE, Professor’s Key to Bank Job। 


এছাড়াও সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান থেকে ৪/৫ নাম্বারের প্রশ্ন আসে। প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়লে এবং সংবাদ দেখলে তার ২/৩ নাম্বার পাওয়া যায়। আর কম্পিউটারের জন্য নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির আইসিটি বই এবং জর্জ’স ইজি আইসিটি বই পড়তে পারেন। আর মানসিক দক্ষতার জন্যও জিম্যাট, এমবিএর প্রিপারেশনের বইগুলো পড়তে পারেন।  






No comments

Powered by Blogger.