Header Ads

ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি করার ১২টি সুবিধা

 ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি করার ১২টি সুবিধা



পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করা কোনো সহজ কাজ নয়, হোক সেটা পার্ট টাইম। অতিরিক্ত হাতখরচের প্রয়োজন না হলে বেশির ভাগ মানুষই এই পথে যেতে চান না। কিন্তু পরিশ্রম ছাড়া যেমন সাফল্য লাভ সম্ভব নয়, সঠিক কাজের পেছনে শ্রম দিলে তার ফলও হয় সুন্দর।


ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি করার ব্যাপারটাও অনেকটা একইরকম। এর জন্য আপনাকে বেশ অনেকটা কষ্ট করতে হবে ঠিক, কিন্তু তা থেকে আপনি লাভবান হবেন নানাভাবে। তেমনই কিছু সুবিধার তালিকা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই আর্টিকেল। চলুন জেনে নেই কেনো করবেন পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরি!



ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি করার ১২টি সুবিধা


১। বাড়তি কিছু হাতখরচ


চাকরি করার প্রথম ও প্রধান কারণ মূলত এটাই। ছাত্রছাত্রীদের হাতে সাধারণত টাকা-পয়সা একটু কমই থাকে। তাই প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে বাবা-মা অথবা বড়দের কাছে টাকা চাইতে হয়। যাতে করে অনেক সময়ই নিজের মতো করে খরচ করার স্বাধীনতাটা থাকে না।


পার্ট টাইম চাকরি থেকে উপার্জিত অতিরিক্ত টাকাটা আপনি যেমন নিজের ইচ্ছামতো খরচ করতে পারবেন, তেমনি একটু একটু করে জমাতেও পারবেন। আর টাকা জমানোর ব্যাপারটা যতো তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় আপনার ভবিষ্যতের জন্য আসলে ততোই ভালো।


। আর্থিক ব্যবস্থাপনা শিক্ষা


ব্যক্তিগত পর্যায়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনা শেখা প্রতিটি মানুষের জন্যেই জরুরী। কিন্তু স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জিনিসটা আমাদের শেখানো হয় না বললেই চলে। টাকা-পয়সার ব্যাপারে নানা রকম সিদ্ধান্ত নিতে শেখা তাই অনেকটাই নির্ভর করে অভ্যাসের ওপর। এবং যখন আপনি নিজে উপার্জন করা শুরু করবেন, শুধুমাত্র তখনই এই ব্যবস্থাপনা শেখা শুরু হবে।


ছাত্রজীবন থেকেই আর্থিক ব্যবস্থাপনার অভ্যাস শুরু করতে পারলে তা আপনার দক্ষতাকে ভবিষ্যতে অনেক শক্তিশালী করে তুলবে।


৩। ট্রান্সফারেবল স্কিল অর্জন


কর্মজীবনে প্রবেশের সময় আগে থেকে কিছু ব্যবহারিক কাজের দক্ষতা থাকার গুরুত্ব অনেক। বইপত্রের পড়াশোনা থেকে যেসব দক্ষতা আমরা প্রায়ই পাই না।


যেমন পার্ট টাইম চাকরি করতে গিয়ে হয়তো আপনাকে একটা টিমের সাথে কাজ করতে হবে, এতে করে আপনার টিমওয়ার্ক স্কিল বাড়বে। আবার একইসাথে কাজ ও পড়াশোনা সামলাতে গিয়ে আপনার সময় ব্যবস্থাপনাটাও শেখা হয়ে যাবে বেশ ভালো ভাবে। এই ধরনের ট্রান্সফারেবল স্কিলগুলো ভবিষ্যতে যে কোনো পেশায় এগিয়ে যেতে আপনাকে সাহায্য করবে।


৪। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি


পার্ট টাইম চাকরি করা মানে নিজের পরিচিত পরিবেশের বাইরে গিয়ে নতুন মানুষদের সাথে কথা বলার সুযোগ, নতুন কিছু শেখার সুযোগ। ভিন্ন ধরনের এই পরিবেশে বিচরণ করার মাধ্যমে যেমন যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে, তেমনি আত্মবিশ্বাসেও বৃদ্ধি দেখা যায়।


আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন। অভিজ্ঞতা যত বহুমুখী, আত্মবিশ্বাস হবে তত দৃঢ়।


৫। যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি


অনেকটা আগের পয়েন্টের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বলা যায়, পার্ট টাইম চাকরি করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের সাথে কথা বলা ও সঠিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করার দক্ষতা অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়। আর এই দক্ষতাটা আপনি যে পেশায়ই যান না কেনো, আপনার অনেক কাজে লাগবে।


বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়ার সময় আমরা যাদের সাথে প্রতিদিন কথা বলি তাদের বেশিরভাগই একই ধরনের পরিবেশে অভ্যস্ত। কিন্তু পার্ট টাইম চাকরি করতে গেলে সহকর্মী থেকে শুরু করে ক্রেতা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিস্থিতি ও সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ হবে। এতে করে বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি যেমন আপনার সম্মান বাড়বে, তেমনি যে কোনো মানুষের সাথে কীভাবে সঠিক যোগাযোগ রক্ষা করা যায় তাও আপনি বুঝতে পারবেন।


৬। স্বাধীনতা অর্জন


সাধারণত চাকরি করা শুরু করলে নিজের মধ্যে একটি সহজাত দায়িত্ববোধ চলে আসে। প্রতিদিন কী কাজ করবেন এবং কতোটুকু পড়াশোনা করবেন সেটা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যেহেতু আপনার, জীবনের অন্যান্য নানান দিকের দায়িত্বও নিজের কাঁধে নেওয়ার ক্ষমতা তখন গড়ে উঠবে।


এতে করে অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন কমে যাবে এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবেন।


৭। সময় ব্যবস্থাপনা শিক্ষা


পড়াশোনা, চাকরি, বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি, নিজের কিছু ব্যক্তিগত কাজ – এ সব কিছু একসাথে চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। কিন্তু সঠিক উপায়ে সময় ব্যবস্থাপনা করতে পারলে সবই করা সম্ভব। আর সেই দক্ষতাটাই আপনি খুব ভালোভাবে শিখে যাবেন ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি করতে গেলে।


যোগাযোগ দক্ষতার মতোই সময় ব্যবস্থাপনাও এমন একটি দক্ষতা যা যে কোনো পেশায় আপনার কাজে লাগবে এবং ভবিষ্যতে নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তবে হ্যাঁ – পরীক্ষার সময় যদি চাকরির জন্য সময় খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে ওঠে, চাকরিদাতা বা ম্যানেজারকে বলে কাজের সময় কমিয়ে নিতে ঘাবড়াবেন না। কারণ ছাত্র হিসেবে আপনার প্রথম দায়িত্ব হয়েছে পড়াশোনা সম্পন্ন করা।


৮। ছাড় ও অন্যান্য সুবিধা


শিক্ষার্থীদের জন্য বেশিরভাগ পার্ট টাইম চাকরির সুযোগ সাধারণত কোনো দোকান বা রেস্টুরেন্টে হয়ে থাকে। আর এ ধরনের চাকরির সাথে আসে নানান রকম ডিস্কাউন্টের সুব্যবস্থা। নিজের পছন্দের দোকানের এমপ্লয়ি হিসেবে আপনি সেখানকার সব সেইল সম্পর্কে তো জানবেনই। পাশাপাশি আপনার জন্য বিশেষ ডিস্কাউন্টও থাকতে পারে।


তবে বেতনের পুরো টাকাটা কেনাকাটার পেছনে খরচ না করে ফেলাই ভালো।


৯। নেটওয়ার্কিং


যে কোনো ক্যারিয়ারে উন্নতির জন্য নেটওয়ার্কিং অপরিহার্য। আপনার পার্ট টাইম চাকরি যদি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হয়, তবুও এখান থেকে আপনার পেশাগত নেটওয়ার্ক বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে।


আপনার বর্তমান চাকরিদাতার কোন কোন ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত লোকজন আছেন তা যেমন আপনি জানেন না, আগামীকাল যে ক্লায়েন্টের সাথে আপনার পরিচয় হবে তিনি কোথায় কাজ করেন তাও আপনি জানেন না। কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি কথোপকথনই তাই আপনার নেটওয়ার্ক বাড়ানোর একটি মোক্ষম সুযোগ এবং এই সুযোগ যারা ছাত্রজীবনে বাড়তি কোনো কিছু করছেন না তারা পাবেন না।


১০। নতুন বন্ধুত্ব


একজন নতুন ব্যক্তির সাথে পরিচয় মানেই একটি নতুন সম্পর্কের সম্ভাবনা। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে অনেকটা সময় আপনাকে কাটাতে হবে এবং অনেক সহকর্মীদের সাথেই সহজাতভাবে আপনার সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে।


বিশেষ করে অন্য শিক্ষার্থীরা যারা একই জায়গায় পার্ট টাইম চাকরি করছেন – তাদের কারও কারও সাথে দীর্ঘ বন্ধুত্বের সূচনা হয়ে যেতে পারে এর মাধ্যমে। আর একটি পরিপূর্ণ জীবন যাপনে ভালো বন্ধুদের ভূমিকা তো বলে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।


১১। কাজ করার অভিজ্ঞতা


খুব স্বাভাবিকভাবেই, পার্ট টাইম চাকরির অভিজ্ঞতা আপনার সিভিকে শক্তিশালী করবে। পরবর্তীতে ইন্টার্নশিপ বা এন্ট্রি লেভেল চাকরি পেতে এই অভিজ্ঞতা অনেক সহযোগী হবে।


একজন শিক্ষার্থীর পার্ট টাইম চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা মানে একদিকে সে যেমন কর্মঠ ও পরিশ্রমী, অন্যদিকে তার কর্মক্ষেত্রের আচার-ব্যবহার ও পরিবেশ সম্পর্কে ইতোমধ্যেই ধারণা রয়েছে। যে কোনো চাকরিদাতাই চাকরি দেওয়ার সময় এ ধরনের আবেদনকারীদেরকে অগ্রাধিকার দেবেন।


১২। সুস্বাস্থ্য


ছাত্রজীবন আপনার জীবনের সবচেয়ে সক্রিয় ও ব্যস্ত সময় হওয়া উচিত। এ সময়ে শরীর ও মনে যে জোর থাকে বয়সের সাথে সাথে তা আর বাড়ে না। জীবনের সবচেয়ে সৌর্যপূর্ণ এই সময়টা আপনি যতো কর্মক্ষমভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, ভবিষ্যতে আপনার স্বাস্থ্য ততোই ভালো থাকবে।


নিয়মিত কাজ করা ও ব্যস্ত থাকা মানে একটি রুটিনের মধ্যে থাকা। সময়মতো খাওয়া, ঘুম এবং পর্যাপ্ত পরিশ্রম করা। এ সবকিছু আপনাকে সুস্থ ও কর্মঠ জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।


No comments

Powered by Blogger.