Header Ads

আমাদের নতুন গৌরবগাথা

 আমাদের নতুন গৌরবগাথা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (PDF)


আমাদের নতুন গৌরবগাথা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

সময়টা ২০২২ সালের এপ্রিল মাস। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কবলে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী দাম, জ্বালানি-ওষুধ ও বিদ্যুৎ সরবরাহে তীব্র ঘাটতি এবং সরকারী দলের দমন-পীড়ন নীতির কারণে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নেমে আসে রাজপথে। তাদের সাথে যোগ দেয় রাষ্ট্রীয় সেবা, স্বাস্থ্য, বন্দর, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও ডাক থেকে শুরু করে প্রায় এক হাজার ট্রেড ইউনিয়ন। তারা দেশের ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পরিবারকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে। কিন্তু সরকার সেনা মোতায়েন করে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে এবং সরকারপন্থিরা বিক্ষোভকারীদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী আহত হন। ফলে আন্দোলন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে জনগণের আন্দোলনের চাপে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ১৩ই জুলাই ভোরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপ, তারপর সিঙ্গাপুরে যান।




ক. কোটা সংস্কার আন্দোলনে বড়ো সাফল্য কত সালে অর্জিত হয়?

খ. ‘অর্ধশত বছর উত্তীর্ণ বাংলাদেশে এ এক নতুন ভাষা’। বাক্যটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকটি ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের যে বিশেষ দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের সামগ্রিকতাকে স্পর্শ করে না।’—মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।


১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

. কোটা সংস্কার আন্দোলনে বড়ো সাফল্য ২০২৪ সালে অর্জিত হয়।


খ. বাক্যটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাষা সৃষ্টি করেছে, যা আগে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ছিল না। এই ভাষা মূলত সকল শ্রেণী, দল, ধর্ম এবং সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা তৈরি করেছে। গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী জনগণ তাদের ভিন্ন মত, বিশ্বাস, বা সংস্কৃতির প্রতি সহিষ্ণুতা এবং সম্মান প্রদর্শন করতে শিখেছে, এবং দেশের উন্নতি ও জনগণের মুক্তির জন্য একযোগভাবে কাজ করার দৃঢ় সংকল্প নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করেছে।


গ. উদ্দীপকটি এবং ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের মধ্যে সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ।


উদ্দীপকে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সাধারণ জনগণ, রাষ্ট্রীয় সেবা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়নগুলো একত্রিত হয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনে সরকারি দলের দমন-পীড়ন এবং সেনা মোতায়েনের মতো ব্যবস্থা নেয়া হলেও, জনগণের বিরোধিতা ও প্রতিরোধে সরকার শেষ পর্যন্ত সরে যায় এবং প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।


এভাবে, বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শুরুতে কোটাব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও ধীরে ধীরে এটি বৃহত্তর জনগণের আন্দোলনে রূপ নেয়। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের কারণে অবশেষে সরকার পতন হয় এবং স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটে। এখানে শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রতিরোধ এবং বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান উভয়ই একটি বিষয়কে সামনে আনে—সেটা হলো, জনগণের অসন্তোষ, সংগ্রাম এবং প্রতিরোধই সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।


এটি প্রদর্শন করে যে, সরকারের দুর্নীতি, অগণতান্ত্রিক শাসন এবং জনগণের প্রতি অবিচারের ফলে জনতা একত্রিত হয়ে সংগ্রামে নেমে আসে। উভয় ক্ষেত্রে সরকার যখন জনগণের আন্দোলনের বিপরীতে দমন-পীড়ন চালায়, তখন আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং অবশেষে জনগণ তাদের অধিকার অর্জন করে। তাই, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের আন্দোলনগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য হলো—জনগণের অভ্যুত্থান শাসকের পতন এবং নতুন একটি সমাজব্যবস্থা নির্মাণের একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করে।



ঘ. ‘সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের সামগ্রিকতাকে স্পর্শ করে না।’—মন্তব্যটির যথার্থ।


‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধে বাংলাদেশের জনগণের একটি বৃহত্তর সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রথমে কোটাব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেছিল, তবে পরবর্তীতে এটি একটি গণআন্দোলনে পরিণত হয়। এই আন্দোলনে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা নয়, বিভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম, ও বর্ণের মানুষ একত্রিত হয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য লড়াই করেছিল। এখানে আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল, শুধু একটিমাত্র রাজনৈতিক দাবি নয়, বরং একটি নতুন গণতান্ত্রিক ও জনবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। প্রবন্ধটির শেষে, ‘নতুন গৌরবগাথা’ একটি নতুন বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে উদ্ভাসিত হয়, যা স্বাধীনতার পরে এক নতুন যাত্রার সূচনা করতে চায়।



অন্যদিকে, উদ্দীপকে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে, যেখানে জনগণ অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট, এবং সরকারের দমন-পীড়ন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল। এখানে মূল আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা। শ্রীলঙ্কায় আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সরাসরি শাসক শ্রেণির পতন এবং প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া, কিন্তু সেখানে নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের বা বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের কথা বলা হয়নি।


সুতরাং, মন্তব্যটি সঠিক, কারণ শ্রীলঙ্কার উদ্দীপকটি ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের সামগ্রিক উদ্দেশ্য বা দৃষ্টিকোণকে স্পর্শ করে না। ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধে যে বৃহত্তর জাতীয় ও সামাজিক পরিবর্তনের স্বপ্ন এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী চিত্র আঁকা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার আন্দোলনে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। শ্রীলঙ্কায় আন্দোলন মূলত একটি অস্থায়ী শাসক পরিবর্তনের লক্ষ্যেই ছিল, যেখানে বৃহত্তর সমাজতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে তেমন দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। ফলে, সাদৃশ্য থাকলেও, উদ্দীপকটি প্রবন্ধের সামগ্রিক ধারণার সাথে পুরোপুরি মিলে না।




No comments

Powered by Blogger.